ফ্ল্যাপে লিখা কথা
আমার বিশ্বাস সমসাময়িক বাংলা সাহিত্যে বুলবুল চৌধুরীকে জোনাকি কিংবা বহমান নদীর প্রতীক হিসেবে ভাবা যেতে পারে। কারণ, ঘোর অন্ধকারে তিনি মুক্তোর দ্যুতি ছড়ান এবং যাবতীয় উদ্ভিদের গোড়া সিক্ত করেন।
গল্পটা কি তা বলতে যাওয়া এই অর্থে নিরর্থক যে, বুলবুল চৌধুরীর সমস্ত লেখার প্রতিটি প্যারা, এমনকি অনেক সময় প্রতিটি বাক্যও এক একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ গল্প হয়ে ওঠে। চোখ কান খোলা রাখলে তাঁর গল্প কিংবা উপন্যাসে আপনি মহাকাব্যের উপাদানও খুঁজে পেতে পারেন। তাঁর লেখা পড়ার একটাই মাত্র শর্ত, মন দিয়ে না পড়লে, দুঃখিত , আপনি তাঁর পাঠক হতে পারছেন না। তাঁর পুঁজি বিচিত্র অথচ বাস্তব সব চরিত্র, সেগুলোর সমৃদ্ধ করবেন। নিজেকে এরচেয়ে বড় পুরস্কার একজন পাঠকের আর কি দেওয়ার থাকতে পারে।
‘মরম বাখানি’র সূচনাতেই রোমহর্ষক রোমাঞ্চ। শুরুতে খুনি খুন করেছে, শেষে খুনি খুন হয়েছে। মাঝখানে উত্তাল তরঙ্গমালার মতো প্রচণ্ড আক্রোশে ফুঁসে উঠতে চাইছে জুট মিলের সব শ্রমিক । খুদু মোল্লাই হয়তো এই কাজের কাজী। কিন্তু কার এত সাহস যে, তার নাম মুখে আনে! মূল কাহিনীর গতিপথ যেমন বিস্ময়কর তেমনি বিচিত্র। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকলে এই বুনন কখনও সম্ভব নয়।
‘এই ঘরে লক্ষ্ণী থাকে’ অসাধারণ একটি উপন্যাস। লেখকের বিরাট সাফল্য বলে মনে করিপড়ে খুব অশান্তি হয়েছে আমার। কী সুন্দর একটি তাজা ফুল প্রথমে আপনাকেও জাদু করবে, মনমাতানো সুগন্ধ ছড়াবে। কিন্তু ক্ষণিকের ভুলে তার পরিণতি দেখে বেশ কিছু দিন আপনার আর কিছু ভালো লাগবে না। তারপর ‘তিয়াসের লেখনে’ সুন্দর আলী গায়েন আর তার বন্ধুপত্নী ফুলটুসির প্রেম। ফুলটুসি স্বৈরিণী, সে আপনাকে বিষম দ্বন্দ্বে ফেলে দেবে। আপনি তার তেষ্টাকে অস্বীকার করতে পারবেন না। আবার স্বীকার-ইবা করবেন কীভাবে? হিরণ তাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘তিয়াস লাগলে পাইন দেওন ছোয়াব, ধর্মে আছে। কিন্তুক মাইনসের লাগি যখন মাহনসের তিয়াস লাগে, তখন কী করন’।
আবার ফিরে আসতে হয় ‘মরম বাখানি’তে। বুলবুল চৌধুরী এই লেখা না লিখলে আমিন মিয়ার বেই ফিরোজা বেগমকে আমরা কোথায় পেতাম, যে টেলিফোন করে তোরাব আলীকে বলছে, ‘জানবাইন আপনার সন্তান আমার ফেটে। আবার জানবাইন তারে আমি দুনিয়ার আলো দেখাইয়া বড় করমু।’
এখানে শুধু দুঃসাহস বা স্পর্ধা দেখানো হয়নি, জীবনের জয়গান যাওয়া হয়েছে।
-শেখ আবদুল হাকিম