ফ্ল্যাপে লিখা কথা
দশকের খুপরিতে কবিতাকে বিচার করবার একটা রেওয়াজ দাঁড়িয়ে গেছে। তবে শুধু রেওয়াজেই বা বলি কি করে, শ্রেণীকরণ ও পর্ববিন্যাস তো যে কোনো বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের স্বীকৃত পদ্ধতি। রেজাউদ্দিন স্টালিনের দশকে অর্থ্যাৎ আশির দশকে বাংলাদেশের কবিতা একটু নিষ্পুভ হয়ে পড়েছিল। তবে কয়েকজন মৌলিকতা ঋদ্ধ,সৃষ্টি-সম্ভব কবির আগমন এই আশির দশকেই ঘটেছে। রেজাউদ্দিন স্টালিন নিঃসন্দেহে তাঁদের একজনম মর্ডানিস্ট বা আধুনিকতাবাদীদের কবিতায় যে বুদ্দিবৃত্তির প্রাধান্য সেটাকে স্টালিন বিকশিত করেছেন। ধ্রুপদী ভাবানুষঙ্গের ব্যবহার, মিথের অর্থবিস্তার, এই মর্ডানিস্ট ধারারই অনুবর্তন।
কবিতা বুঝবার জন্য না জানবার জন্য, কবিতার প্রাণ তার অর্থময়তা, ভাব না সঙ্গীত, পরিমিতি না নির্মিতি, অনুভূতির তীক্ষ্ণতা না দর্শন ,এ বিষয় নিয়ে অনেক তর্কাতর্কি হতে পারে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে , কবি মনের যদি থাকে উড়াল দেবার শক্তি, যতি এটা কবিতাকে পরিচিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের উর্ধে্ব কোনে মানসলোকে নিয়ে যেতে পারে, সেই হবে অবিনাশী কাব্যগুন। রেজা্উদ্দিন স্টালিনের সেই অবিনাশী কাব্যগুনসম্পন্ন কবিতা পরাস্বপ্ন আর যাদুবাস্তবতার বিজ্ঞানমনস্ক নিরীক্ষায় বাংলা কবিতাকে দিয়েছে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিত। দার্শনিক অনুভাবনায় তিনি তৈরি করেছেন জীবন জিজ্ঞাসার নুতন সূত্র। তিরিশ এবং ষাটের দশকের বাংলা কবিতায় যে বিপুল পালা বদল ঘটে সেই আলোড়নের সমৃদ্ধ প্রেক্ষাপট সত্ত্বেও তরল রঞ্জককর হাত থেকে বাংলা কবিতাকে উদ্ধার করে স্টালিন দাঁড় করিয়েছেন ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের মুখোমুখি। স্টালি নিজস্ব পরীক্ষা করেছেন, নিজস্ব অস্মিতা নির্মাণ করতে পেরেছেন। শুরু থেকেই মহৎ প্রবণতার ধারায় প্রবিষ্ট তার কবিতা বিশ্বমানবতার, প্রত্যাশার স্বপ্নে নিরন্তর গতির ভিতর দৃশ্যজগত অনুভূতির জগৎ পারিপার্শিকতা লালন করে বিশ্বজনীন চিন্তায় নিমগ্ন।