“আমিই খোদা (আনা আল হক্ক) আমিই একমাত্র সত্য (আনা আল হক্ক)” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
হাজার বছরের অধিক সময় ধরে মরমী প্রেমের শহীদ মনসুর হাল্লাজের ‘আনা আল-হক্ক তথা আমিই খােদা’ নামক যে উক্তিটি আরবসহ সমগ্র বিশ্বে আলােড়ণ সৃষ্টি করে আসছে। এই গ্রন্থটি তারই। উজ্জল দৃষ্টান্ত স্বরূপ প্রকাশিত।
ব্যক্তিসত্তা হিসেবে ‘আমি’র সৃষ্টির আগে, গােটা মানব জাতির অধীনে সমস্ত ‘আমি’ আকারহীন সত্তারূপে নাছুত) বিরাজমান ছিল অতিন্দ্রীয় পরম উপস্থিতির ভেতর সৃষ্ট সত্তা রূপে আবির্ভাবের ভেতর দিয়ে ‘আমি’ বিযুক্ত হয়ে গেছে অতিন্দ্রীয় সত্তা থেকে। এরপর থেকে সৃষ্ট ‘আমি’র সাধনা পরম উপস্থিতির ভেতর ফিরে যাওয়া।
পরম সত্তা সৃষ্ট মানবসত্তার অন্তরে নিজের সাক্ষ্য দেন এবং বান্দা তার সত্তার শূন্যস্থানে ভালােবাসার অতিথিকে অভ্যর্থনা করেন। এই একত্বের সারসত্তা হলাে প্রেম । সাধকের ভাবাবেশের বিরল কোনাে। মুহূর্তে অসৃষ্ট স্বর্গীয় সত্তা আচ্ছন্ন করতে পারে মানবাত্মাকে এবং তা কথা বলতে পারে মানবজিহ্বায় । মানবাত্মার জায়গা নিয়ে এই ঐন্দ্ৰীয়িক প্রকাশ পরমের । হযরত মুসার সামনে জ্বলন্ত ঝাড় রূপে পরমের আবির্ভাবের ক্ষণটি একই রকম এক বিরল মুহূর্ত।
এই বিরল মুহূর্তে, দ্বৈততা যখন ঘুচে যায়, পরম যখন নিজের সাক্ষ্য দেন প্রেমাস্পদের জিহ্বায় ‘আনা আল-হক্ক।’ এই উক্তির অর্থ ‘আমিই খােদা। নিজেকে প্রকাশ করা নয় বরং পরম সত্তা নিজেই তার সাক্ষ্য দিচ্ছেন ক্ষুদ্র আমির বিলীন অস্তিত্বের ভেতর থেকে সাধকের জাগতিক সমস্ত কিছু সহ তার ‘আমি’ও শূন্য হয়ে গেছে। পরম উপস্থিতি ‘আমি’র উপস্থিতিকে সরিয়ে নিজেই সেই জায়গা নিয়েছে (He is he)। ওই অবস্থায় সাধকের ‘আমি’ই যখন নাই। তখন ব্যক্তি ‘আমি’র ঐশ্বরিক দাবির প্রশ্ন অনুপস্থিত।
তাই মনসুর আল-হাল্লাজের উক্তি যার শুরু, শেষ, পরিবর্তন, কারণ, বাস্তবতা, কৌশল কিছুই জানা নেই তাকে কীভাবে জানা যাবে। এই স্তরই ফানাফিল্লাহর স্তর-যেখানে সাধক বলে, আনা আল-হক্ক; গুপ্তজ্ঞানের ভেদরহস্য এখানেই…।