“অগ্নিরথ” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
এই উপন্যাসের সমগ্ৰ কাহিনীর ওপর আলাের মতাে ছড়িয়ে আছে যে-তরুণটি, যার নাম সায়ন, সে তখন পাহাড়ে এসেছে তার দুরারােগ্য অসুখের চিকিৎসা করাতে ডাক্তার আঙ্কলের ছােট্ট সেবাকেন্দ্র নিরাময়’-এ। ডাক্তার আঙ্কল এখানে সেবাব্রতের যে-দীপশিখাটি জ্বালিয়ে রেখেছেন তা আপন শক্তিতে অনির্বাণ। ব্রাউন, ম্যাথুজ, কঙ্কাবতী, পদম বাহাদুর, ডাক্তার তামাং, ছােট বাহাদুর, আমেরিকান মহিলা এলিজাবেথ প্রমুখ অনেকে নিরাময়ের প্রতিবেশী, সহায়ক কিংবা শুভানুধ্যায়ী। এঁদের সকলের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে সায়ন। সায়নকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত এক মিথ। ব্রাউন তার মুখের আদলে খুঁজে পেয়েছেন যিশুর মুখের সাদৃশ্য। সায়নই কি সেই চিরন্তন পরিত্রাতা মহামানব? এমন একটি সম্ভাবনা সায়নের মা নন্দিনীর বুকের ভেতরেও উকি দিয়ে গেছে। এমনকী দরিদ্র অশিক্ষিত পাহাড়িরাও ভেবেছে সায়ন দেবলােকের কেউ। পাহাড়ে সায়নকে ঘিরে যখন তৈরি হয়েছে এক একটি কাহিনীবলয়, তখন কলকাতায় তাদের পুরনাে রায়বাড়ির উনিশশতকী রীতিনীতির অস্থিপঞ্জরে বেজে উঠেছে ভাঙনের সুর। ঘরের কোণে জ্বলে উঠেছে বিদ্রোহের আগুন। সেই আগুনেরও ইন্ধন লিউকোমিয়া রােগাক্রান্ত সায়ন। অথচ এই অগ্নিভ ছেলেটিকে একদিন গ্রাস করল পাহাড়েরই হিংস্র অগ্নিব্যাঘ্র। পাহাড়ের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা ও কাজ শুরু করেছিলেন এলিজাবেথ। তাকেই একদিন নগ্ন করে চরম অপমান করল জিপে-চড়ে-আসা চারজন উদভ্রান্ত যুবক। সায়ন তার অসুস্থ শরীরে বাধা দিতে চেষ্টা করেছিল আপ্রাণ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে নিজেই ধরা পড়ল জ্বলতে থাকা জিপের অগ্নি-আলিঙ্গনে। জ্বলন্ত আগুনের সেই রথ ক্রমশ আকাশ অধিকার করে চলে গেল আরও দূরতর কোনও আকাশে। তারপর লক্ষ লক্ষ অগ্নিরথ হয়ে ছড়িয়ে পড়ল ব্রহ্মাণ্ডে।