“মসলার যুদ্ধ” বইটির ভূমিকার অংশ থেকে নেয়া:
স্বাধীনতা-উত্তর কালের বেশির ভাগ সময় শ্রীযুক্ত সত্যেন সেন কাটিয়েছেন পূর্ব বাংলার কারাগারগুলােতে রাজনৈতিক বন্দীরূপে। সেই বন্দীদশায় তাঁর বেশির ভাগ বই লেখা হয়। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সে সব বই পূর্ব বাংলায় পাঠক-চিত্তকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল।
মসলার যুদ্ধ’ এই বইগুলাের একটি। এই ছােট বইটিতে ইতিহাসের একটি পুরােনাে অধ্যায়কে তিনি তুলে ধরেছেন অত্যন্ত মনােজ্ঞরূপে। মসলার বাণিজ্য করে কালিকট রাজ্যে এককালে সমৃদ্ধিলাভ করেছিল। সেই সমৃদ্ধি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল পাের্তুগালের-কালিকটে অধিকার বিস্তার উদ্দেশ্যে অভিযান শুরু হয় পঞ্চদশ শতকে। কিন্তু শুধু কালিকট নয়। মসলার উৎপাদন বিস্তৃত হয়েছিল পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে। পাের্তুগালের দেখানাে পথ ধরে সেখানে এল ওলন্দাজরা, তারপর ইংরেজরা-সপ্তদশ শতাব্দীতে। মসলার লােভে ইউরােপীয় শক্তিসমূহের অভিযান এবং ভারত ও পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে তাদের উপনিবেশ-স্থাপনের বিচিত্র কাহিনী এ গ্রন্থে বিবৃত হয়েছে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষকরূপে। শুধু ইতিহাসের তথ্য নয়, এর অন্তরালবর্তী সত্যই লেখককে আকর্ষণ করেছে বেশি। তাই যে-সব শক্তি ইতিহাসের ধারাকে গতি দেয়, সেগুলাে উদঘাটন করেছেন লেখক। সে যুগের মানুষের জীবনযাত্রার নানা দিক তুলে ধরেছেন তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে।
একদিকে উপনিবেশ-স্থাপন ও সাম্রাজ্য-বিস্তার, কুৎসিত লােভ ও বর্বর অন্যায়, মানুষের জীবনযাত্রা-নিয়ন্ত্রণের ঔপনিবেশিক প্রচেষ্টা; অন্যদিকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতারক্ষার সংগ্রাম, দেশীয় শক্তি ও সম্পদ বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা, বেঁচে থাকবার প্রাণান্ত প্রয়াস। মসলার যুদ্ধ’ তারই ইতিবৃত্ত।
সরল ভাষায়, মনােজ্ঞ ভঙ্গিতে, মর্মস্পর্শী করে এ বিবরণ শ্রীযুক্ত সত্যেন সেন লিপিবদ্ধ করেছেন। আশা করি, পাঠকদের তা ভাল লাগবে।