“বেউলফ” বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ
প্রাচীন বাংলা তথা চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে বর্তমান বাংলার তফাত যেরকম, প্রাচীন ইংরেজি তথা “বেউলফ’-এর অ্যাংলাে-স্যাক্সন ভাষার সঙ্গে বর্তমান ইংরেজির তফাত প্রায় সেইরকম। অ্যাংলাে-স্যাক্সন কথাটা এসেছে জর্মনীয় গােত্র এঙ্গেলদের নাম থেকে। এই ভাষা ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে তদানীন্তন রােমক শাসিত ব্রিটেনে নিয়ে আসে তিনটি জর্মনীয় গােত্র : অ্যাঙ্গেল, স্যাক্সন এবং জুট বা গিটরা। অ্যাঙ্গেল, স্যাক্সন এবং জুটদের জীবনযাত্রা ছিল কঠোর। সমুদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের বাঁচতে হত। অপেক্ষাকৃত সুফলা ও শান্ত ব্রিটেনে এসে যখন তারা ঘর বাঁধল, তখন তাদের কাব্যসাহিত্যে পূর্বতন সংগ্রামী জীবনের কঠোরতার ছবি একটা বড় অংশ অধিকার করল। তারা বিশ্বাস করত উইয়ার্ডে বা নিয়তিতে, যে নিয়তি ক্ষমাহীন কঠোরতার সঙ্গে লালন করে মানুষকে। একটা করুণ বিষন্নতা প্রাচীনতম ইংরেজি কবিতার অন্যতম প্রধান সুর। নিয়তির সামনে মানুষ প্রতিকারহীন অক্ষমতার শিকার। নীরবে সহ্য করে যাওয়া ছাড়া তার আর কোনও উপায় নেই।
এই নিঃসঙ্গ করুণ বিষন্নতার মধ্যে খ্রিস্টীয় ধর্ম-অনুভূতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি এসে একসময় তার স্থান করে নিল। ষষ্ঠ শতাব্দীতেই একবার রােম থেকে এক বিশেষ ধর্মপ্রচারক দল এসে অ্যাংলাে-স্যাক্সনদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করে গিয়েছিল। তার পর অবশ্য ভাইকিংরা তাদের আক্রমণ-যজ্ঞ পরিচালনার সময় গির্জা এবং অন্যান্য ধর্মীয় সৌধগুলাে ধ্বংস করে ফেলেছিল। কিন্তু পরে তারাও খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল, যার ফলে ১০৬৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মান অভিযানের সময় খ্রিস্টধর্মাবলম্বী একদল যুদ্ধ করল খ্রিস্টধর্মাবলম্বী অন্য দলের সঙ্গে। প্রাচীন ইংরেজি বা অ্যাংলাে-স্যাক্সন কাব্যের যেসব নিদর্শন আমাদের কাছে এসে পৌছেছে তার রচনাকাল আনুমানিক ৬০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ। এই সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত কীর্তি ‘বেউলফ’, যার মধ্যে মহাকাব্যের বহু গুণ বিদ্যমান। কোনও কোনও সমালােচক-গবেষক মনে করেন যে, “বেউলফ’-এর রচনাকাল ৭২০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। যেসব প্রাচীন ইংরেজি হিরােয়িক কাব্যের সাক্ষাৎ আমরা পেয়েছি তার মধ্যে এইটিই দীর্ঘতম এবং পূর্ণাঙ্গ।