বই পরিচিতি:
আসিফ মেহ্দীর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত রম্যগল্প এবং রম্যলেখার একটি চমৎকার কালেকশন এই বই। লেখাগুলোতে একদিকে যেমন আছে হাস্যরস; অন্যদিকে তেমনি সামাজিক অসঙ্গতিগুলোও সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আসিফ মেহ্দীর প্রতিটি লেখায় পাঠকের জন্য রয়েছে কোনো না কোনো মেসেজ। অণুরম্যের এই বইটি আপনাদের শুধুমাত্র অনাবিল আনন্দ দেবে তা-ই নয়; পাঠকমাত্রই জীবন ও দেশ নিয়ে আরেকবার গভীরভাবে ভাবার তাগিদও অনুভব করবেন।
আসিফ মেহ্দীর লেখাগুলো নিয়মিত পড়তে ফেসবুকে তাঁর ফ্যান পেজ ‘Ektu Hashun (একটু হাসুন)’-এ জয়েন করতে পারেন।
লেখক পরিচিতি:
বর্তমান প্রজন্মের রম্যলেখক আসিফ মেহ্দী। জন্ম ১৯৮৫, ২১ সেপ্টেম্বর, কুষ্টিয়ায়। তবে বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। মূলত ‘রস আলো’-র আইডিয়াবাজ হলেও পাশাপাশি লেখালেখি করেন ‘উন্মাদ’ ও ‘ক্রিটিক’-এর মতো জনপ্রিয় ম্যাগাজিন বা ট্যাবলয়েডে।
ছাত্রজীবনে ‘টাটকা’, ‘বদহজম’, ‘হযবরল’, ‘কপাট’ (বুয়েটের টার্ম ম্যাগাজিন) ইত্যাদি প্রায় দুই ডজন পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছেন। প্রিন্টিং মিডিয়ার বাইরে কাজ করেছেন ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও। ‘এটিএন বাংলা’ চ্যানেলে প্রায় তিন বছর শিশু-কিশোরদের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন।
এতকিছুর পরও পড়াশোনায় রেজাল্ট করেছেন অসাধারণ। এসএসসি ও এইচএসসি দুটো পরীক্ষাতেই ঢাকা বোর্ড থেকে স্ট্যান্ড করেছেন। বি,এ,এফ, শাহীন কলেজ তেজগাঁওয়ে কেটেছে তাঁর স্কুলজীবন। তারপর নটরডেমে কলেজজীবন শেষে বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন (অনার্সসহ) কমপ্লিট করেছেন।
ভালো ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ ছাত্রজীবনে পেয়েছেন ‘বিমানবাহিনী প্রধানের শ্রেষ্ঠ মেধা ট্রফি’, নটরডেম থেকে ‘অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স’, বুয়েট থেকে একাধিকবার ‘ডীন স্কলারশীপ’, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে একাধিকবার ট্যালেন্টপুলে ‘বোর্ড স্কলারশীপ’ এবং আরও নানাবিধ পদক ও সম্মাননা। বর্তমানে তিনি দেশের অন্যতম মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন লিমিটেডের ভ্যাস অপারেশনে সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি তাঁর লেখায় সামাজিক অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং হাস্যরসের মাধ্যমে তাঁর মেসেজগুলো পাঠকের কাছে পৌঁছে দেন। তিনি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি এবং ছড়া-প্যারোডি লিখতেও পছন্দ করেন।
বইটির উৎসর্গপত্র:
একজন মানুষ প্রায়ই আমাকে কৌতুক শোনান। কৌতুকগুলো আলোচনার প্রসঙ্গক্রমেই আসে। তাঁর ঝুলিতে বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত ভুঁড়ি-ভুঁড়ি কৌতুক রয়েছে। তিনি কৌতুক বলেন আর আমার মুখের দিকে তাকান। আমি একট্ওু হাসিমুখ করলে তাঁর মন আনন্দে নেচে ওঠে। কিন্তু আমি হাসি না। আমি যে আসলে হাসতেই ভুলে গেছি।
সবসময় ছায়ার পেছনে ছুটে চলা ক্লান্ত-অনুভূতিহীন আমি হারিয়েছি কৌতুক শুনে সাবলীলভাবে হাসার ক্ষমতা। তবে যেমন অভিব্যক্তিই ফুটে উঠুক আমার চোখে-মুখে, সদাপ্রাঞ্জল এই সহজ-সরল মানুষটি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। তাঁর আরেক পরিচয়-তিনি আমার বাবা। বই উৎসর্গ প্রসঙ্গে অনেকের নামই আমার মাথায় আসছে; কিন্তু যখনই মনে হচ্ছে এটি আমার জীবনের প্রথম বই, তখন মনের মাঝে হাতড়ে কেবল আমার বাবার নামটিই পাচ্ছি- মোঃ সুজায়াত হোসেন
ভূমিকা
এখন আমরা একটা বেতাল সময়ের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমার গল্প বা লেখাগুলোতে তালগোল-পাকানো বর্তমান পরিস্থিতি অথবা তালকানা অর্থাৎ তালজ্ঞানহীন দুর্নীতিবাজদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তাই বিষয়বস্তুর সঙ্গে তাল মিলাতে ‘বেতাল রম্য’ নামটি বেশ মানানসই মনে হলো। একসময় ছড়া-কবিতাই বেশি লিখতাম। রস আলোতে ছড়া পাঠাই, ছাপা হয় না। আবারো পাঠাই, আবারো ছাপা হয় না! যেন একটা প্রসেস দাঁড়া হয়ে গেল- আমার লেখা পাঠানো আর না-ছাপা হওয়ার প্রসেস। লেখা পাঠাতে পাঠাতে যখন ধৈর্যের স্ফুটনাঙ্কে পৌঁছলাম, তখন একদিন রস আলোর বি.স. সিমু নাসের আমাকে ডেকে পাঠালেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর তিনি অত্যন্ত আদর-আপ্যায়ন করে পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে ছড়া-কবিতা তিনি পছন্দ করেন না। আমাকে চার শ শব্দের মধ্যে একটি রম্যগল্প লিখতে বললেন। বিশ্বকাপ ফুটবলের মহা সমারোহকে সামনে রেখে লিখে ফেললাম ‘আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দম্পতি’। পরের সপ্তাহেই গল্পটি রস আলোতে ছাপা হলো। এই গল্পের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে ঈদের নাটক করার প্রস্তাব দিল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। নাটকটি প্রচারিতও হয়েছিল। তারপর শুধু এগিয়ে যাওয়ার গল্প। একে একে আমার আরও লেখা প্রকাশিত হতে থাকল। কিছু প্রকাশিত ও কিছু অপ্রকাশিত রম্যগল্প বা রম্যলেখা নিয়ে আমার এই প্রথম বই।
এই বই প্রকাশের ব্যাপারে যার কাছে আমি অপরিসীম কৃতজ্ঞ, তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় রম্যলেখক, স্বনামধন্য কার্টুনিস্ট ও স্যাটায়ার ম্যাগাজিনের পথিকৃৎ ‘উন্মাদ’-এর কর্ণধার আহসান হাবীব।
বইটি আপনাদের একটুও ভালো লাগলে ভীষণ আনন্দিত হব; সেইসঙ্গে উৎসাহিত হব। অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আপনাদের সবার দোয়া প্রার্থনা করছি। বইটি পড়ে আপনাদের অনুভূতি বা যেকোনো পরামর্শ জানাতে আমাকে ই-মেইল করতে পারেন: [email protected]
আসিফ মেহ্দী
মিরপুর, ঢাকা
১৯ অক্টোবর, ২০১১