ছেলেবেলা। শহর নওগাঁ। মায়ের কোল, মাঠ, পার্ক, পুকুরের ঘাট। এক সারি ছোট বাড়ি। যমুনার কোল। সিরাজগঞ্জের গাঁ। ছুটে আসে বানের স্রোত। গা ভাসান তাতে। পানি বাড়ে। মাছ ধরা পড়ে। পাট পচে। শাপলা ফোটে। শরৎ। হেমন্ত আসে কলাইয়ের ক্ষেতে। শীত আসে হাড় কাঁপাতে। পিঠে পুলির দিন। বিছানার নীচে মালসায় আগুনের রাত। তার পরে সূর্যের তাপ বাড়ে। আল্লাহ মেঘ দে। আসে আম কুড়ানোর বৈশাখ। ঝড়ে ঘর কাঁপে। জ্যৈষ্ঠ আসে। আম লিচু পাকে। কাঠালের ভুতি গন্ধ ছড়ায়। রোজ সূর্য ওঠে ঈদগাহের ওপর দিয়ে। রোজ পথ চলা। নগ্ন পা। মসজিদ, এলিয়ট ব্রীজ, কদম গাছ, মাদ্রাসা। মাঠ, মড়াকাটা ঘর, ছোট নদী, ঘরে ফেরা। সন্ধ্যাবেলায় লণ্ঠন জ্বেলে পড়া। বুড়িগঙ্গার তীর। বক্সিবাজার। ঢাকা কলেজ, রেলপথ, য়ুনিভার্সিটি, সবুজ মাঠ রমনার। রক্তরাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারী। সেন্ট্রাল জেলখানা, নতমাথা, ভালবাসা, বকুলের সারি। তোপখানা, কাকরাইল, এশিয়া বাইক, চাকরী। তারও পরে পরবাসে। নওগাঁ থেকে বহুদূরে সাত সমুদ্র পারে হিমশীতল বৃষ্টিভেজা ম্যানচেস্টারে। অনেক ঘরে বাস, অনেক চেনা মুখ, অনেক প্রিয়জন। তারি মাঝে জীবনযাপন। জীবনের এক সারি খ-চিত্র এঁকেছেন মাহফুজুর রহমান। উঠে এসেছে গ্রাম, সমাজ, জীবন, যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশভাগ, ভাষা-আন্দোলন …। তাঁর আশা কেউ কেউ হয়তো ছবিগুলো নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে কোথাও কোনও মিল খুঁজে পাবেন। বলেছেন, তাতেই তাঁর আনন্দ।