প্রথম পর্বের শেষ ম্যানচেস্টারে। তারপর ঢাকায় ফেরা। প্রিয়জনে সঙ্গ। আবার ঘর বাঁধা। ফুলার রোডে, আজিমপুরে। বদলে যাচ্ছে ঢাকা। রয়ে যায় আমলাতন্ত্রের গতানুগতিকতা। তার মধ্যেও বৈচিত্রের সন্ধান পান লেখক। বাইরে ঢেউ ওঠে দেশ জুড়ে। গণঅভ্যুত্থান, হরতাল, মশাল মিছিল, গুলিবিদ্ধ মানুষ, কার্ফু, মার্শাল ল’। ফের দেশ ছাড়া। এবারে হল্যান্ডের রটরডামে। সবুজ, সুন্দর দেশ। দেখা মেলে একজন বড় মাপের মানুষের। মানুষের ভালবাসা মেলে। লেখাপড়া চলে। হঠাৎ দেশ থেকে আসে দুঃসংবাদ। ঘুর্ণিঝড়। খবর আসে পঁচিশে মার্চের নৃশংসতার। চেনা চেনা মানুষ নিহতের তালিকায়। স্ত্রী, পুত্র-কন্যা পৌঁছে রটরডামে। তাদের নিয়ে আবার সুখে ঘর বাঁধা। আসে স্বাধীনতার বার্তা, তার সঙ্গে আরও নৃশংসতার খবর। লেখাপড়া সেরে পুনশ্চ ঢাকায়। স্বাধীন দেশ, নূতন দেশ। বদলে গেছে অনেক কিছুই। তার সঙ্গে হারিয়ে গেছে অনেকে। আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে আপনজন। এরি মধ্যে পরিবাগে খুঁজে পাওয়া একটা ছোট্ট শান্তির নীড়। পাঁচিল ঘেরা বাড়ি, গাঁয়ের আদল। শিউলি ঝরা উঠোন, পাখি ডাকা ভোর। একদিন পাঁচিল টপকে আসে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর। ওলটপালট হয়ে যায় জগৎ। তবু আবার একদিন গতানুগতিকতায় ফেরা। আবার দেশ ছাড়া। পরিবাগের মাটি ছেড়ে নিউ ইয়র্কের সুউচ্চ তলার অ্যাপার্টমেন্টে। আন্তর্জাতিকতায়। সেখানে ইস্ট রিভারের তীরে আবার ঘর বাঁধা। কেটে যায় সেই ঘরে তিনটি যুগ। এই দীর্ঘ সময়ের বিচিত্র কয়েক সারি ছবি লেখক তুলে ধরেছেন বইটির স্বল্প পরিসরে। তাতে রয়েছে অসংখ্য নূতন মুখ, নূতন সখ্য, বারে বারে পুরাতন মুখ ফিরে পাওয়া। রয়েছে সুখ, স্বচ্ছলতা। তার পাশে ব্যথা বেদনা। নিউ ইয়র্কে বাস করেও কিসের দুর্বার টানে লেখক অতীতে ফিরে যান বারে বারে। ঘর থেকে পথে পা ফেলেও চলে যান কোনও পুরাতন ঘরে। দেখেন সেই ছেলেবেলার সেই পার্কের হারিয়ে যাওয়া মুচকুন্দের কাছেই বেড়ে উঠছে দুটি শিুশু মুচকুন্দ।