“তমস” বইটি সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ দেশভাগের (১৯৪৭) প্রাক্কালে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের একটি ছোট শহর (বর্তমানে পাকিস্তান) ও আশপাশের গ্রামের অশান্ত ও রক্তক্ষয়ী সামপ্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতির নিখুঁত বর্ণনা তমস-এ বিধৃত। ওই দাঙ্গার শুরু হয় মসজিদের সিঁড়িতে মরা একটি শূকর পাওয়ার পর। ওই শূকরটি হত্যা করে নাথু। সে সমাজের একেবারে নিম্ন শ্রেণীর লোক। চামার। মরা পশুর ছাল ছড়ানো তার একমাত্র কাজ। মিউনিসিপ্যালিটির কর্মচারী মুরাদ আলী নাথুর কাছে একটা মরা শূকর চাইলো। বলল, পশুচিকিৎসক চেয়েছে। এ জন্য সে নাথুকে পুরো পাঁচটি টাকা অগ্রিম দিল। নাথু ‘না’ করতে পারেনি। কার নির্দেশে বা পরামর্শে মুরাদ আলী এ উদ্যোগ নেয় তা রহস্যাবৃত থেকে যায়। এর পরিণতি হয় ভয়াবহ। হিন্দু, মুসলমান ও শিখ সমপ্রদায়ের লোকেরা অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যার উন্মত্ত প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ। ধর্মের নামে ধর্মীয় মূল্যবোধের কি অবমাননাকর পরিণতি! বেদনাদায়ক, বীভৎস! মানবাত্মার অপমান? এর বাইরে আর কী হতে পারে! এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতারা দলীয় ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। দাঙ্গা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির প্রেক্ষাপটে কার্ফু জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের অনুরোধকে প্রশাসন উপেক্ষা করে। পরে অবশ্য ওই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, কিন্তু ততদিনে অনেক প্রাণহানি ঘটে, সম্পত্তি ধ্বংস হয়, আর প্রায় প্রতিটি পরিবারেই হারানোর বেদনা আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে। ওই ভয়াবহ দাঙ্গায় সাধারণ লোক প্রাণ হারায়, সম্পদ হারায়, মেয়েরা লাঞ্ছিত হয়। যারা বেঁচে থাকে তাদের স্থান হয় উদ্বাস্তু শিবিরে। এক সময় হত্যাযজ্ঞ থেমে যায়, মানুষের উন্মত্ততার অবসান ঘটে। সব কিছু চলতে থাকে। কিন্তু বেঁচে থাকা মানুষের মন থেকে ওই ভীতিকর স্মৃতি কখনো মুছে যায় না। সামপ্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে তমস-এর আবেদন জোরালো ও সুদূরপ্রসারী এবং তা মানুষকে মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে। উপন্যাসখানি হিন্দি ভাষায় রচিত। এর ইংরেজি অনুবাদ ১৯৮১ ও ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়।