ফ্ল্যাপে লিখা কথা
বদরুদ্দীন উমরের জন্ম ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিম বাঙলার বর্ধমান শহরে। মার্কবাদী তাত্ত্বিক, রাজনীতিবিদ, প্রাবন্ধিক ও েইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি বাঙলাদেশের সুপরিচিত । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ পাশ করার আগেই ১৯৫৪ সালে দর্শন বিভাগে অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে এম. এ. পাশ করার পর ১৯৫৬ সালে চট্রগ্রাম সরকারী কলেজ এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শন ,রাজনীতি ও অর্থনীতি এই তিন বিষয়ে অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগেরও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। ষাটের দশকে প্রকাশিত তাঁর তিনটি বই সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬), সংস্কৃতি সংকট (১৯৬৭) ও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৫৯) তৎকালে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় পাকিস্তান সরকারের সাথে তাঁর বিরোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং তিনি নিজেই ১৯৬৮ সালে অধ্যাপনার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে জিনেক নিয়োজিত করেন। বদরুদ্দীন উমর ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-তে যোগদান করেন। ১৯৭০-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর মার্চ পর্যন্ত পার্টির প্রকাশ্য মুখপত্র সাপ্তাহিক গণশক্তি সম্পাদনা করেন। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পার্টি লাইনের বিরোধিতা করে পর পর দুটি দলিল পার্টিতে প্রদান করেন এবং ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর থেকে তিনি এদেশে কমিউনিষ্ট আন্দোলন পুনর্গঠনে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি শ্রমিক ও কৃষক, বিশেষ করে কৃষক এলাকায় সংগঠন গড়ে তোলার কাজে সরাসরি যুক্ত থেকে বাঙলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা সফর করেছেন। পাশাপাশি প্রগতিশীল সাংষ্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজও করেছেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন ও বাঙলাদেশ লেখক শিবির-এর সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-এর সভাপতি।
রাজনৈতিক প্রয়োজনে নিয়মিত প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি বাঙলাদেশে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে মার্কসীয় ধারার সূচনাকারী বদরুদ্দীন উমর। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ওপর তিন খণ্ডে রচিত ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ এর ধারায় তাঁর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রচনা। স্কুল পাঠ্য বিষয় হিসেবে ইতিহাসকে উঠিয়ে দেয়ার সাথে বাঙলাদেশের শাসক শ্রেণীর শ্রেণী চরিত্রের সম্পর্কটি তিনিই খোলাখুলিভাবে উন্মোচন করেছেন। একই সাথে তিনি জনগণের মুক্তিসংগ্রামের সাথে ইতিহাস চর্চার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের।