ফ্ল্যাপে লিখা কথা
এক অদ্ভুত গল্পকথক তার মনোযোগী অথচ মুখর শ্রোতাদের শোনাচ্ছেন একালের এক রূপকথা- রাজকুমারী বর্ষাজ্ঞালির স্বয়ংবর সভার গল্প। জনবহুল জায়গাগুলোতে গল্পের আসর জমান এই গল্পকথক, কোনো বিনিময় -মূল্য ছাড়াই, স্রেফ নিজের আনন্দের জন্য আর মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকা গল্পগুলোকে শ্রোতারও্ একইসঙ্গে কথকও বটে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নানা আলোচনায় অংশ নেয়, তর্ক-বিতর্ক করে, ঝগড়াঝাঁটিও হয় পরস্পরের সঙ্গে, আর আসরটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত, তৈরি হয় বর্ণনার বহুকণ্ঠ। এই গল্পটি যেহেতু একালের রূপকথার, তাই, স্বয়ংবর সভার খবরটি রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়লো মিডিয়ার কল্যাণে, চললো তাদের নানারকম আয়োজন। পাণি-প্রার্থিরাও তাদের গল্প বলতে গিয়ে কথক আর শ্রোতাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে উঠে এলো সমকালীন আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ভূমির এক মনোজ্ঞ বিবরণ। আর গল্পের শেষে এক অসামান্য প্রেমের আভাসে কোমল-গভীর-বেদনাঘন অনুভূতিতে ছেয়ে গেল শ্রোতাদের মন। এই সময়ের এক সংবেদী রূপকার,বহুমাত্রিক ও শক্তিমান কথাশিল্পী আহমাদ মোস্তফা কামাল তাঁর অনুপম-সজীব-নির্বিকল্প গদ্যে উপহার দিয়েছেন অভিনব এই উপন্যাস- আখ্যানপর্ব এবং নির্মাণশৈলী দুই বিবেচনাতেই। তাঁর জাদুবিস্তারি বর্ণনায় পাঠক ঘোরগ্রস্থ হবেন, আর উপন্যাসের শেষে গিয়ে কোমল আচ্ছন্নতায় ভরে উঠবে মন। কবি মোশতাক আহমদের মতো কোনো সংবেদনশীল পাঠকের হয়তো মনে হবে-পাঠ শেষে মধ্য রাতে সমুদ্র শহরের শেষ বাড়ির বারান্দায় এসে দাঁড়াতে হলো। প্রায় সাথে সাথেই পেছনের জলমগ্ন ধান ক্ষেতে ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামলো । মনে হলো, ‘বর্ষামঞ্জলি’ তো রাজকুমারী ছদ্মবেশে বাংলাদেশের প্রকৃতির নাম, কিংবা ‘বর্ষামঞ্জরি’ই হচ্ছে বাংলাদেশ।