ভূমিকা (লেখকের কথা)
এই বইয়ের সায়েন্স ফিকশন তিনটির আইডিয়া অনেক দিন ধরেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেজন্য বেশ অস্বস্তিতে ছিলাম। একপর্যায়ে সঙ্গে যুক্ত হলো লোডশেডিং এবং গরমের অস্বস্তি। আর পারলাম না। অস্বস্তি কমানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম। যেহেতু লোডশেডিং আর গরমের অস্বস্তি কমানো সম্ভব নয়, তাই ঠিক করলাম, সায়েন্স ফিকশন তিনটি লিখে ফেলে অস্বস্তি কমাব! বেশ কিছুদিন সময় লাগল লিখতে। লেখাগুলো দিয়ে বই প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে একটি প্রকাশনী। তাই এ মুহূর্তে বেশ আছি!
বই পরিচিতি:
এই বইয়ের কল্পকাহিনি তিনটিতে রয়েছে স্থান-কাল-পাত্রের বিভিন্নতা। চেষ্টা করেছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বৈচিত্র্যময়তার সন্নিবেশ ঘটাতে। গল্প তিনটি যদি আপনাদের কল্পনার আকাশে একটুও রঙ ছড়ায়, তাহলেই আমি পরিপূর্ণ স্বস্তি পাব!
এই বইয়ে আছে আপনাদের প্রিয় লেখক আসিফ মেহ্দীর তিনটি সায়েন্স ফিকশন। সেগুলোর কাহিনিসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো:
১. ধ্রুব তূবার কানের কাছে মুখ বাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘একটা বিশাল কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছি, তূবা। ব্যাপারটা কেউ জানে না। তোমাকেই শুধু জানাতে চাই। আমি প্রকৃতির একটি বড় রহস্য আবিষ্কার করে ফেলেছি। এখনও কিছু কাজ বাকি। পুরোটা শেষ হলে তোমাকে ডিটেল বলব।’ এই বয়সী একটা ছেলে কোনো মেয়ের কানের এত কাছে মুখ এনে এমন আঁতেলীয় মার্কা কথা বলতে পারে, তা আজকের এ ঘটনা না ঘটলে তূবা বিশ্বাসই করত না! কিন’ আঁতেল ধ্রুব যা আবিষ্কার করেছে, তা সত্যিই পৃথিবীর যুগান্তকারী একটি আবিষ্কার! সেই আবিষ্কার নিয়েই ‘ভয়ংকর অনুনাদ’।
২. শান্ত একটি গ্রহ। ছায়া-সুনিবিড় একটি গ্রহ। সবুজে ঠাসা একটি গ্রহ। নির্মল পানি ও ঠাণ্ডা বাতাসের একটি গ্রহ। যেকোনো আগন্তুক গ্রহটিতে গেলে তার বিস্ময়ের সীমা থাকবে না! কোনো কলহ নেই, কোনো দূষণ নেই, কোনো যুদ্ধ নেই। যেন অপার শান্তির অপূর্ব লীলাভূমি! কিন্তু কিছুটা গভীরে গেলেই তিনি হতবাক হয়ে যাবেন! বুঝতে পারবেন, পুরো গ্রহ জুড়েই বিরাজ করছে দগদগে ক্ষত। প্রতিটা মুহূর্ত ভীষণ আতংকে ছটফট করছে সবাই। এই গ্রহের পরিণতি নিয়েই ‘বিজ্ঞানী গারাদের ত্রাসের জগৎ’।
৩. জারিফের বোন মীমের কঠিন অসুখ। অজানা এই অসুখের উপসর্গগুলো খুবই বিচিত্র ও ভয়াবহ! দেশ-বিদেশের কোনো ডাক্তারই এই মারাত্মক রোগের কারণ খুঁজে পাননি। জারিফও জানে যে তার বোনের মৃত্যু অনিবার্য। তবুও সে আশা ছাড়েনি। জারিফ কি পারবে তার আদরের ছোট্ট বোন মীমকে বাঁচাতে? তা নিয়েই ভিন্ন ধাঁচের সায়েন্স ফিকশন ‘ফ্রিয়ন’।
লেখক পরিচিতি:
চশমা পরা, শান্ত-শিষ্ট গোলগাল চেহারার ভালো ছাত্রটিকে দেখলেই যে কেউ চোখ বন্ধ করে বলে দিত, এ ছেলে বড় হয়ে নির্ঘাৎ ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। হলোও তা-ই। আসিফ মেহ্দী বুয়েটের পড়াশোনা শেষে পুরোদস্তুর ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলেন। কিন্তু কেউই ভাবেনি, ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি ছেলেটি একদিন লেখকও হয়ে যাবে। কেউ না ভাবলে কী হবে, আসিফ মেহ্দী সত্যিই আত্মপ্রকাশ করেছেন লেখক হিসেবে। এই যে, এই মুহূর্তে আপনার হাতেই আছে তাঁর প্রকাশিত দ্বিতীয় বইটি!
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত আসিফ মেহ্দী। ছাত্রজীবনেই সম্পাদনা করেছেন টাটকা, বদহজম, হযবরল, কপাট ইত্যাদি-সহ প্রায় দুই ডজন পত্রিকা। ব্যস্ততার কারণে এখন আর পত্রিকার সম্পাদনা করা না হলেও লেখালেখিটা ছাড়তে পারেননি। অবিরত লিখে চলেছেন দেশসেরা দুই ফান ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’ ও ‘রস আলো’তে। হাস্যরসের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন অসংগতিগুলো পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরছেন প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি লিখছেন গল্প আর বিজ্ঞান কল্পকাহিনিও। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘বেতাল রম্য’ আশাতীত সাড়া ফেলেছে পাঠকের মাঝে।
শুধু লেখালেখিই না, খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও আসিফ মেহ্দী বেশ সফল। ছোটবেলা থেকেই এসব ক্ষেত্রে পেয়েছেন অনেক অনেক পুরস্কার। কাজ করেছেন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও। স্যাটেলাইট চ্যানেল ‘এটিএন বাংলা’য় প্রায় তিন বছর উপস্থাপনা করেছেন শিশু-কিশোরদের একটি অনুষ্ঠান। শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ ছাত্রজীবনে পেয়েছেন ‘বিমানবাহিনী প্রধানের শ্রেষ্ঠ মেধা ট্রফি’, নটরডেম কলেজের ‘অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স’, বুয়েট থেকে একাধিকবার ‘ডীন স্কলারশিপ’, ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে একাধিকবার ট্যালেন্টপুলে ‘বোর্ড স্কলারশিপ’-সহ নানাবিধ পদক আর সম্মাননা।
আসিফ মেহ্দীর জন্ম ১৯৮৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, কুষ্টিয়ায়। বর্তমানে কর্মরত আছেন দেশের শীর্ষ মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণফোন’-এর সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
আসিফ মেহ্দীর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত, নতুন-পুরোনো লেখাগুলো নিয়মিত পড়তে পারেন তাঁর পেজ ‘একটু হাসুন’ থেকে:
https://www.facebook.com/Ektu.Hashun
কোনো প্রকার উৎসাহ-উদ্দীপনা-উৎকোচ-উস্কানি ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বপ্রণোদিত হয়ে ‘ফ্রিয়ন’ সায়েন্স ফিকশনের জন্য এই লেখক পরিচিতিটি লিখে দিয়েছেন আসিফ মেহ্দীর ক্লোজ ছোট ভাই পাভেল মহিতুল আলম।
উৎসর্গপত্র:
জন্মের সঙ্গেসঙ্গেই একটি মহাযন্ত্রণা মানুষের জন্য অবধারিত হয়ে যায়। তা হলো: মৃত্যুযন্ত্রণা। কিন্তু মায়েদের সহ্য করতে হয় আরও একটি মহাযন্ত্রণা। সেটি হলো: সন্তান জন্ম দেওয়ার যন্ত্রণা। সেই কঠিন কষ্ট হাসিমুখে বরণ করে নেন মায়েরা!
এটি আমার সায়েন্স ফিকশনের প্রথম বই। আমার স্বপ্নের একটি সৃষ্টি। পৃথিবী নামের এই গ্রহে যে মানুষটির কাছে আমি সবচেয়ে বেশি ঋণী, তাঁকে বইটি উৎসর্গ করছি! তিনি আমার আজন্ম ভালোবাসার মানুষ, আমার মা- সাহানা সুলতানা।