ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
কাজী নজরুল ইসলাম আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান পুরুষ। সাহিত্যের জগতে তাঁর আবির্ভাব ও প্রস্থান দুই-ই আকস্মিক-অনেকটা যেনো তাঁর প্রিয় শিল্প-প্রতীক ‘ধূমকেতু’র মতোই। তাঁর জীবন যেনো এক নাটকীয় বিন্যাসের রচিত। সাহিত্য-সঙ্গীত-সাংবাদিকাত-রাজনীতি-এর সব ক’টি ক্ষেত্রে তাঁর ছিল স্বচ্ছন্দ বিরণ এবং এক আশ্চর্য প্রতিভায় তিনি এর সমন্বয় সাধন করেছেন! বাংলা সাহিত্যে-বিশেষ করে কবিতায এক নতুন সুরের প্রবর্তক তিনি-বাংলা গানে যোগ করেছেন বাণী ও সুরের বৈচিত্র্য-সংবাদ-সাময়িকপত্র সম্পাদনা-পরিচালনায় এনেছেন অভিনবত্ব-রাজনীতির ক্ষেত্রে শ্রমজীবী গণমানুসের মুক্তির সংগ্রামে সমর্পিত করেছেন নিজেকে। এক উদার-অসাম্প্রদায়িক মন ও মতের মানুষ ছিলেন নজরুল। বাঙালিসমাজে নজরুলের যতোটুকু কমনোযোগ গুরুত্ব ও স্বীকৃতি-সম্মাননা লাভের কথা ছিল, কথা ছিল, তা তিনি পুরোপুরি পান নি। তাঁর জীবন ও কর্মকৃতির যথার্থ ও সামগ্রিক মূল্যায়নও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথের গোছানো স্বভাব, গুণাগ্রাহী পরিকরের সহায়তা এবং সবার ওপরে প্রাতিষ্ঠানিক আনুকূল্যের কল্যাণে তাঁর জীবন ও সাহিত্যকর্মের তথ্যেপকরণ সংরক্ষিত ও সংসৃহীত হয়েছে। কিন্তু নজরুলের ক্ষেত্রে তা সেইভাবে হওয়ার সুযোগ মেলে নি। সমকালে এই উদ্যোগের গুরুত্ব তাঁর ঘনিষ্ঠ দু-চারজন ছাড়া আর কেউ অনুভব করেন নি। উত্তরকালে নজরুচর্চার গরজে এ-বিষয়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। কিন্তু বিলম্বের কারণে ততোদিনে অনেক মূল্যবান উপকরণই বিনষ্ট বা দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। ‘অজ্ঞাত নজরুলের সন্ধানে’ বইটিতে অনুসন্ধিৎসু গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী নানা সূত্র থেকে নজরুল-সম্পর্কিত অজ্ঞাত-দুষ্প্রাপ্য তথা উদ্ধার-সংগ্রহ করে পাঠক-সমীপে পেশ করেছেন, যার ফলে নজরুলের অনেক অজানা দিকের প্রতি আলোকপাত সম্ভব হয়েছে।