রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি ভুবনে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। বাঙালি সে মহৎ উত্তরাধিকার বহন করে থাকে বলে আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু আশ্চর্যের হলেও সত্য যে রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশা থেকে এ পর্যন্ত নানাভাবে যুক্তিহীন প্রশ্নে বিদ্ধ। ব্যতিক্রম নয় মুসলিম বঙ্গ। সেখানে চল্লিশের দশক থেকে রবীন্দ্র প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন কম ওঠে নি। এর মূলে রয়েছে সম্প্রদায়চেতনা ও ধর্মীয় সংস্কৃতির রক্ষণশীলতা। শিক্ষিত মুসলমান সমাজ এদিক থেকে দ্বিভাজিত।
পাকিস্তান-উত্তর স্বাধীন বাংলায় রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হওয়া এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতের ক্রমবর্ধমান বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্রচর্চা জোরকদমে চলে নি। বাঙালি মুসলমানের পরিচিতি সংকট বা অন্য যে কারণে হোক প্রাতিষ্ঠানিক রবীন্দ্রচর্চা দুর্বল পর্যায়ে রয়ে গেছে। সরকারি পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবার্ষিকী বিশাল আয়োজনে বর্ষব্যাপী পালিত হওয়ার পরও ঐ দুর্বলতা কাটেনি। বাংলাদেশী সংস্কৃতি এ স্ববিরোধিতা থেকে মুক্ত হতে পারে নি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রচর্চার বিতর্কিত সামাজিক সাংস্কৃতিক পূর্ব-প্রেক্ষাপট এবং ঐ চর্চার ধারাবাহিকতা সংক্ষিপ্ত রূপরেখায় তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রগবেষক আহমদ রফিক তার প্রকাশিত ‘রবীন্দ্রচর্চা বাংলাদেশ’, বইটিতে। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকারি পর্যায়ে এতাবৎ পূর্ণাঙ্গ রবীন্দ্রগবেষণার কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। এ বইয়ের মূল আকর্ষণ ব্যক্তিক প্রচেষ্টায় আশির দশকের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের দশকব্যাপী রবীন্দ্রচর্চার বিশদ বিবরণ যা এদেশে রবীন্দ্রচর্চার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অংশ।