ফ্ল্যাপে লিখা কথা
‘গ্রামোফোন’-বাঙালি এক কালে যাকে চিনতো ‘কলের গান’ নামে তার অস্তিত্ব বেশ কয়েক দশক আগেই বিলুপ্ত। প্রায় আশি বছর ধরে বাঙালির গৃহ-বিনোদনের প্রধান উপকরণ ছিল কলের গান। বাঙালির সংগীত-সংস্কৃতির ইতিহাসেও গ্রামোফোনের গভীর সম্পর্ক রয়ে গেছে। গ্রামোফোনের কল্যাণে বাংলা গানের ও সেই সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতেরও প্রচার-প্রসার-রূপান্তর ঘটেছে। বহুকাল পর্যন্ত গ্রামকেন্দ্রিক লোকজগান ও ধর্মীয় সংগীত ছাড়া আর প্রায় সবধরণের সংগীতই বন্দি ছিল নবাব-নাজিম-রাজা-জমিদার-বিত্তশালী অভিজাতশ্রেণী কিংবা জাতে ওঠা শ্রেষ্ঠীর দরবার-জলসাঘর-বাগানবাড়ী-বৈঠকখানায়। এই অবস্থা থেকে সংগীতকে মুক্তি দিয়ে তা ক্রমে আমজনতার উপভোগের সামগ্রী করে তোলে গ্রামোফোন। গ্রামোফোনের কল্যাণেই আবার অনেক নতুন সংগীতপ্রতিভার আবিষ্কার ও জন্ম সম্ভব হয়।
বঙ্গদেশের কলের গানের আবির্ভাব ও গান রেকর্ডিংয়ের রয়েছে শতবর্ষেরও বেশি সময়ের এক ঐতিহ্যময় ইতিহাস।এক অসম প্রতিযোগিতা-তবুও বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশি কোম্পানিও রেকর্ড তৈরি শুরু করে। গওহরজান-লালচাঁদ বড়াল-পিয়ারা সাহেবের মতো খ্যাতিমান গায়কেরা গান-রেকর্ডিংয়ের সূচনা যুগের স্মরণীয় শিল্পী। এরপর বাংলা গানকে পর্যায়ক্রমে পর্যায়ক্রমে যাঁরা জনপ্রিয় করে তোলেন, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় কে, মল্লিক, আব্বাসউদ্দীন, শচীন দেববর্মন, কমলা ঝরিয়া, যূথিকা রায়ের নাম। সুরসৃষ্টি ও গীতরচনার ক্ষেত্রেও বাংলা গান ঋদ্ধ হয়েছে এই সময়কালে-বিবর্তনের ধারায় এসেছে বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব। কমল দাশগুপ্ত ও প্রণব রায় -তিরিশের দশকের এমনই দু’কজন অসামন্য সংগীত ব্যক্তিত্ব-একজন সুরস্রষ্ট্রা ও আরেকজন গীতিকার হিসেবে বাংলা গানে এনেছিলেন যুগান্তর। বাঙালির কলের গান-এই বইয়ের আবুল আহসান চৌধুরী স্বর্ণযুগের এইসব শিল্পী -সুরকার-গীতিকার, রেকর্ড কোম্পানি এবং রেকর্ড সংগীতের কথা বলতে গিয়ে গ্রামোফোন-নির্ভর সংগীত-সংস্কৃতির প্রামাণ্য আলেখ্য রচনা করেছেন দুষ্প্রাপ্য, অজ্ঞাত ও নতুন তথ্যের আলোকে।