স্বৈরাচারের রোষানলে পগড় ১৯৮৩ সালে নিষিদ্ধ হয়েছিল নিভৃতচারী এই কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘এই অবরুদ্ধ মানচিত্রে’। কারণ তাঁর কবিতার অস্থিমজ্জায় মিশে আছে দ্রোহ। সামরিক স্বেরশাসনের ভয়ঙ্কর থাবার ভেতরে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তিনি যথার্থই লিখেছেন, ‘আমার ভেতরে ভয়ডরহীন যে-কবিমানুষটির বসবাস তারও জন্ম হয়েছিল এই সময়ের গর্ভে। সময়টি কতোটা আগ্রাসী ছিল তা আজ কল্পনা করাও কঠিন। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ও স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে হত্যা করা হয়েছে- সপরিবারে এবং নজিরবিহীন নৃশংসতার সঙ্গে। ঘাতকেরা সদম্ভে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা দেশ। অন্তহীন এই দাপট। সবচেয়ে গ্লানিকর বিষয় হলো- বঙ্গবন্ধু নিজে যে-রাষ্ট্রটির জন্ম দিয়েছেন সেই রাষ্ট্রই অবতীর্ণ হয়েছিল ঘাতকের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায়। এই বাস্তবতা আমার মধ্যে যে ক্রোধ ও দ্রোহের জন্ম দিয়েছিল- গ্রন্থভুক্ত কবিতার বড়ো অংশই জুড়ে আছে তার বোবা আর্তনাদ। দ্রোহের কবিতার এই মলাটের মধ্যে আগ্রহী পাঠক পেয়ে যাবেন শ্বাসরুদ্ধকর সেই সময়ের নিখাদ এবং দুর্লভ একটি ছবিও। তবে প্রায়শ সবকিছুকে ছাপিয়ে ওঠে মা, মানুষ ও মাতৃভূমির প্রতিটি প্রাণ ও ধূলিকণার জন্য কবির অনন্য এক মমত্ববোধ। মজ্জাগতভাবে বিদ্রোহী হলেও উচ্চকণ্ঠ নয় তাঁর কবিতা।’ ভরা নদীর মতো তাঁর বিদ্রোহে গতি আছে, গর্জন নেই। একেবারেই স্বতন্ত্র তাঁর কণ্ঠস্বর।