বলয়গ্রাস

৳ 630.00

লেখক
প্রকাশক
আইএসবিএন
(ISBN)
9789350201039
ভাষা বাংলা
পৃষ্ঠার সংখ্যা ১৪৪
সংস্কার 2nd Edition, 2015
দেশ ভারত

এই গন্ধ আর শব্দলােকের মাঝখান থেকে কিছুতেই উঠে যেতে পারে না সে, আগুনের আঁচে সিদ্ধ হয়ে গেলেও না। এক দিকের পায়াভাঙা একটা খুরসি পিঁড়িতে বসে দুলে দুলে গুন গুন করে অবিরত কেঁদেই চলে। সে কান্নারও অবশ্য একটা ভাষা আছে ,সে ভাষা ভিক্ষার। যতাে রকম ভােজ্যবস্তুর নাম তার জ্ঞান-জগতে ধরা পড়েছে।
একে একে সেইগুলি উচ্চারণ করে করে সে শুধু বলতে থাকে “দাও”। “ভাত দাও” “মাছ দাও”, “আলু দাও”, “চিনি দাও”—প্রার্থনার আর শেষ নেই। যেন অতােটুকু বয়সেই জেনে ফেলেছে সে—সত্যকার প্রাপ্য পাওনা তার কিছুই নেই, আবেদনের জোরে যেটুকু আদায় করা যায়।
তবে সে আবেদনে কর্ণপাত করবার মতাে সহৃদয়তা কারুরই বড় দেখা যায় না। চড়াই পাখির ছানার মতাে ছােট্ট এই মেয়েটা যেন বাড়ি সকলের বিরক্তি উৎপাদনের একটা কেন্দ্র।
কাক বা বেড়ালের মতাে ‘দূর দূর’ ‘ছাই ছাই’ ভাব রয়েছে সকলের মনে, নেহাৎ মানুষজাতীয় জীবনটাকে তাড়া দিয়ে পাড়াছাড়া করা অথবা উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই বােধ করি ভাঙা ওই পিঁড়িখানা অধিকার করে বসে থাকতে দেওয়া যায় তাকে। দেখা যায় দিনের পর দিন তার সেই একঘেয়ে আবেদনের ভঙ্গি।

Ashapurna Debi
(৮ই জানুয়ারি, ১৯০৯ – ১৩ই জুলাই, ১৯৯৫) বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক। ১৯২৪ সালে, মাত্র ১৫বছর ৮ মাস বয়সে কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কালিদাস গুপ্তের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তাঁর রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তাঁর জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাঁকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন। তাঁর প্রথম প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা-বকুলকথা উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তাঁর একাধিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। দেড় হাজার ছোটোগল্প ও আড়াইশো-র বেশি উপন্যাসের রচয়িতা আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার সহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে প্রদান করেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র পুরস্কার। ভারত সরকার তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমী ফেলোশিপে ভূষিত করেন। ১৯৯৫ সালে ১৩ জুলাই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।


বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ