বাউল সাধনা আমাদেরকে এমন একটি বিচিত্র অভিজ্ঞতার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়; যা একদিকে যেমন সাধারণ তেমনি অসাধারণও বটে। একদিকে এই সাধনা ইন্দ্রিয় আচারভিত্তিক যৌননির্ভর, অন্যদিকে মরমী বা সর্বতোভাবে আধ্যাত্মিক। অধ্যাত্ম সাধনার স্বরূপ কি? ধর্মীয় জীবনতো মূলত আধ্যাত্মিক চেতনার নির্দেশক। বাউল সাধক বেহেস্তের প্রতি আগ্রহী অথবা দোজখের ভয়ে ভীত নন, সে সম্পর্কে তারা চিন্তাও করেন না। তারা প্রেমিক। সুফিদের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে কিন্তু সুফিদের মতো তারা জীবন বিমুখ নন। বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের সাথেও তাদের সাদৃশ্য আছে। মৃত্যুকে তারা অস্বীকার করেন না মৃত্যুকে তারা জয় করতে চান। বৈষ্ণব সহজিয়াদের সাথে তাদের মিল আছে, কিন্তু তারা শুধু ভক্তিবাদী নন-তারা জ্ঞানেও বিশ্বাসী। কামাচার তাদের সাধনার অঙ্গ হলেও তারা কামুক বা কামাচারী নন, কামকে জয় করে কামাতীত জীবনে পৌঁছানোকে তারা মোক্ষ মনে করেন। বাউল জীবনসর্বস্ব নয়। বাউল মতাদর্শের বড় কথা হচ্ছে অধ্যাত্মিক জীবনের স্বাধীন সত্তার সন্ধান। তবে এই স্বাধীন সত্তা যাকে বাউলেরা ‘অচিন মানুষ,’ ‘অধর মানুষ,’ ‘মনের মানুষ’ রূপে কল্পনা করেছে। এই চেতনা বস্তুজগতের বিরোধী নয় বরং বলা যেতে পারে বস্তুজগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এর অনুপ্রবেশ। মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক সত্তা প্রতিষ্ঠাই বাউলদের কাম্য। তাই ভাববাদের সঙ্গে বস্তুজীবনের সংযোগ সাধন করেই সে গড়ে তোলে তার আধ্যাত্মিক চিন্তা। বাউলেরা হৃদয়বৃত্তির গুরুত্ব অনুভব করে। বাউলের এই হৃদয় বা মন হচ্ছে একপ্রকার জ্ঞান বা অন্তর্দৃষ্টি। ড. আনোয়ারুল করীমের দীর্ঘদিনের গবেষণার ফসল “বাংলাদেশের বাউল”। এতে বাউলদের সমাজ, সাহিত্য ও সংগীত নিয়ে বিশদভাবে তথ্যসহ বর্ণনা করেছেন তিনি। রসিক পাঠক এবং সাহিত্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদা মেটাবে “বাংলাদেশের বাউল”। বইটি বাংলা সাহিত্যে নতুন সংযোজন সন্দেহ নেই।