রোজ একঘেয়ে কয়েক কিসিমের কাজ সেরে ঘুণ-জর্জর শরীর টেনে ছলেমান টিনের ছাপরায় যখন ফেরে, হাঁটুর জোর তখন নস্যাৎ হওয়ার উপক্রম। পেরেশানের চাপে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মুহূর্তে যেন গুঁড়ো হবে সে। কাঁহাতক আর সহ্য হয়, দু’দণ্ড জিরিয়ে নেওয়ার ফুরসত কই! সময়-অসময় নেই, দৌড়াও বাজারে, ব্যাপার কী, মাছ-গোশত-তরকারি হেন কিছু বাকি নেই, সদ্য সে কিনে ফিরেছে, আবার কেন? সালাদের জন্য ক্যাপসিকাম, লেটুস পাতা দরকার, সাহেবের বিদেশ-ফেরত মেদ-মটকু ছেলেটা দুপুরে খাবে। কোনো কোনো দিন বাজারের ব্যাগটা ফ্লোরে কেবল নামিয়েছে, বেগম সাহেবার চোঙা ফুকানো নীরস স্বরের নির্দেশÑকোলেসটেরলমুক্ত সয়াবিন তেল চাই। বাজার নয়, এবার সে ডিপার্টমেন্টাল সেন্টারে ঢোকে। কাচের দরজা টেনে টাইলসের ঝকঝকে সেন্টারে ঢুকতেই ঠাণ্ডা, আহ্, আরামে শরীর জুড়িয়ে আসে। কিসের শরীরÑপোড়া কালচে খোসার হাড্ডি-কাঠামোকে খাটুয়ে গতর বলা যায়। রোদের দাহ নিয়ে ক্ষয় পায়ে ফিরে আসার পর এবার কী কাজÑফুল গাছের পাতা মোছা হয়নি, বাইরের ধুলো এসে পড়ে সব সবুজ নোংরা হয়ে আছে। তারপরÑকোনো শেষ নেই এর, দুপুরের খাড়া সূর্য খুলির ওপর ধরে সাহেবের অফিসে পৌঁছে টুকরো টুকরো হুকুম পালন তো আছে। তাহলে দাঁড়ালো কী; ছলেমান একাধারে বাসার দৈনন্দিন ঘরকন্নার চাকর, কাজের ফাঁক ভরাটে কখনো ঝাড়ুদার, কখনো মালি, আবার সাহেবের অফিস খাদিম। মানুষ একটা, দু’হাত-পা নিয়ে কত আর খাটতে পারে!