তমিজ উদ্দীন লোদীর শুরুটা সত্তরের দশকে হলেও তিনি বিকশিত আশির দশকে। আশির দশকের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবেই তিনি চিহ্নিত। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার, সমাজ-রাষ্ট্র ধারণার পরিবর্তন-এর সাথে কাব্য ভাষার পরিবর্তন ঘটে গেছে। এটি তাঁর কবিতা ধারণ করেছে। তাঁর কবিতা কেবলমাত্র অর্থহীন শব্দ, কতোগুলো ধ্বনির সমাহার কাব্য বলে প্ররোচ্য নয়, যুক্ত হয়েছে নির্মাণ মনস্তত্ত্ব। শুধু মনস্তুষ্টিতে তন্ময়ী নয়, বরং তাঁর কবিতা লাভ করেছে এক নতুন গদ্যলিরিক এবং নিরেট গদ্যবিস্তার। নানা তত্ত্বের সংমিশ্রণে দর্শন-বিজ্ঞান-ইতিহাসচেতনা এবং সমাজ রাষ্ট্র মানব হিতৈষী, ব্যক্তির স্বাধীনতা ঘোষণা করছে দ্ব্যর্থহীন। তাঁর কবিতার একটে বড় গুণ যে, তিনি বিষয়ের অনুভব পাঠকের দিকে ঠেলে রাখেন এবং নিজে বসে থাকেন তার সৃষ্টির সামনেÑশিল্পী যখন কোনো ব্যক্তির চিত্র চিত্রণে যতœবান হয় তখন সেই ব্যক্তিটি আবিষ্কারের অপেক্ষায় কম্পমান এক অনাবিষ্কৃত জগতের মতো। তিনি থেকেছেন বাস্তবে, সে বাস্তবটা তাঁর আকাক্সক্ষার ভেতর লড়াইরত, জিতবার আনন্দ আছে, অনুদ্ধারের বিষাদ আছে এবং এসব নিয়ে তাঁর কবিতার পঙ্ক্তি ছড়িয়ে গেছে বিমূর্ত শিল্পে ধারক-বাহকদের শিল্পবোধ পর্যন্ত। নির্মাণকলায় তিনি এমন একটা সম্মোহন তৈরি করতে পেরেছেন সহজ করে বলার মধ্য দিয়ে, যা পাঠককে নিয়ে যাচ্ছে নিজের দিকে, চোখ-মুখ খুলে জানবার ও চিনবার দিকে, তাঁর পরিপার্শ্বের দিকে আর অবারিত করছে দুঃখের উৎসগুলোকে কাব্যিক শিল্পচেতনায়। তাঁর কবিতাচেতনার কবিতা, নিছক কবিতার জন্য কবিতা নয়। এক লাবণ্য ছড়িয়ে তিনি সেই কথাগুলোই বলতে চাইছেনÑমানুষের দুঃখ বেদনার রাশি রাশি ইতিহাস।