আজকে যিনি মননশীল ও বিচক্ষণ পাঠকদের কাছে এক পরিচিত নাম, সেই প্রজ্ঞাবান প্রাবন্ধিক সনৎকুমার সাহার লেখালেখির শুরুটা হয় রাজশাহী থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্র পূর্বমেঘ-এ। ১৯৬১ সালে যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল প্রয়াত জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সুনিপুণ সম্পাদনায়। ষাটের দশকের প্রায় পুরোটা জুড়েই সনৎকুমার সাহার লেখালেখি সেখানে সাদরে স্থান পেয়েছিল। পরে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সম্পাদনায় সাড়া জাগানো ছোটকাগজ কণ্ঠস্বর-এও তিনি লিখতে আরম্ভ করেন। উপরোক্ত দুই পত্রিকায় ষাট ও সত্তরের দশকে প্রকাশিত তাঁর এগারোটি প্রবন্ধের সাথে প্রায় একই সময়ে লেখা আরো তিনটি প্রবন্ধ যোগ করে নির্মিত হয়েছে এই বই। একজন মেধাদীপ্ত তরুণের ষাট-সত্তরের দশকে লিখিত সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি সংক্রান্ত প্রাণবন্ত ও মৌলিক চিন্তা-সংবলিত প্রবন্ধগুলো যেগুলো কিনা এতদিন একরকম দু®প্রাপ্যই ছিল এখনও যে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং ভাবনা-জাগানিয়া, বইটি পড়লে আশা করি তা সম্যকরূপে অনুধাবন করা যাবে। সনৎকুমার সাহার এখনকার লেখার সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, সেই তরুণ-বয়স হতেই তাঁর প্রাবন্ধিক-সত্তা কখনই যুক্তিবিচারের পথকে পরিত্যাগ করেনি। নিজের মত প্রকাশে তিনি বরাবরই এক শান্ত সাহসের পরিচয় দিয়ে এসেছেন, যেখানে তাঁর যুক্তি সুদঢ়, কিন্তু অযথা উচ্চকণ্ঠ নয়। প্রতিপক্ষের মতকেও তিনি বিচার করেন ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে। হুজুগের ডামাডোল থেকে বেরিয়ে নির্মোহভাবে পরিপার্শ্বকে দেখার শিক্ষা আমরা তাঁর লেখা থেকে পাই। সমাজ-সংস্কারের তৎকালীন ও সাম্প্রতিক সঙ্কট বিষয়ে স্বচ্ছ-সঠিক দিকনির্দেশনা মিলবে এ গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধসমূহ থেকে এমন কথা আশা করি অত্যুক্তি বলে বিবেচিত হবে না