এ কোনো পাপের ফসল নয়, ভালবাসার পরিণতি। অবিবাহিত সোমা সিদ্ধান্ত নিল গর্ভের সন্তানটিকে রেখেই দেবে। যেভাবেই হোক, তাকে সে পৃথিবীর আলো দেখাবেই। এক্ষেত্রে হার মানবে না। সে জানে হেরে যাওয়ার জন্য কেউ পৃথিবীতে আসে না। প্রতিটা মানুষের ভেতরেই জন্মগতভাবে লড়াই করার প্রবণতা থাকে। জন্মকান্নার মধ্য দিয়ে সেটা সে জানান দেয়। নিজেই নিজেকে সাহস দেয় সোমা- তুমি বাঁচবে, অবশ্যই বাঁচবে। তোমার ভেতরে বেড়ে ওঠা প্রাণটিও বাঁচবে। সেই থেকে শুরু পরিবার-পরিজন ছেড়ে অন্য এক জীবন। অন্য এক লড়াই। সঙ্গে যুক্ত হলো মাদার তেরেসা মাতৃসদন ও অনাথ আশ্রম- শুধু সোমার সন্তান নয়, যারা একাত্তরের যুদ্ধশিশুদের অনেককেও রক্ষা করেছিল। এখনও যারা রক্ষা করে যাচ্ছে সমাজের চোখে ‘অবাঞ্ছিত’ শিশু আর তাদের মায়েদের। একটি প্রাণ মানেই অমিত সম্ভাবনা; আর নতুন প্রত্যাশা- সূচনাতে এর অপমৃত্যু কেবল সম্ভাবনার বিনাশ ঘটায় না; একাধারে এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান মানুষের ভেতরকার রূপের পরিচয় প্রকাশ করে। নানা বাঁক বদলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় সম্পূর্ণ ভিন্নধারার এক কাহিনি। নব্বইয়ের দশকে কবিতা দিয়ে শুরু মুস্তাফিজ শফির লেখকজীবন। শুধু কবিতামগ্নতা নয়, দীর্ঘ পথচলায় আত্মপ্রকাশের আঙ্গিক হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন আরও শিল্পকৌশল। গবেষণা এবং শিশুসাহিত্যে তার দক্ষতা প্রমাণিত; ছোটগল্প-বড়গল্পে চর্চা অব্যাহত রেখে এবার উপন্যাসের বিস্তারিত প্রেক্ষাপটে নিজেকে স্থাপন করলেন। ঈশ্বরের সন্তানেরা বই আকারে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস; কথাসাহিত্যের শক্ত মাটিতে তার সাহসী পদচ্ছাপের স্বাক্ষর। নিয়তিনির্ভর মানুষ তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে সাহসে সর্বস্ব নিয়ে দাঁড়ায়- এই প্রত্যয় নিয়ে মুস্তাফিজ শফি এই উপন্যাসে নিজেকে উজ্জ্বল করে তুলেছেন।