“আমার ছেলেবেলা” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
মানুষের জীবনে শৈশব এবং কৈশাের বলে যে সময়টা আসে, তাই তার ছেলেবেলা। এর ব্যাপ্তি সীমাবদ্ধ এবং আয়ু অত্যন্ত সীমিত। তবে সীমিতকালের জন্য এলেও মানুষের জীবনে ছেলেবেলা আসে আনন্দে ভরা ঐশ্বর্য নিয়ে। মানুষ তা উপভােগ করে নিজেকে নিঃশেষে বিলিয়ে দিয়ে। ছেলেবেলার আয়ুষ্কাল স্বল্প হওয়ার কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে থাকে। সে সঙ্গে মানুষকে করে তােলে। স্মৃতিভারাক্রান্ত। তখন প্রতিটি মানুষ তার হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলাকে ফিরে পাওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সে যখন বুঝতে পারে তার ছেলেবেলা আর ফিরে আসবে না, তখন সে তার সুখদুঃখে মেশানাে ছেলেবেলার কথা আপনজনদের কাছে বলে আনন্দ পেতে চায়- এটা মানব জীবনের এক সহজাত প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তিকে অস্বীকার করতে পারেননি বলেই মনীষীরা তাদের ছেলেবেলার কথা লিখে রেখে গেছেন। তার অতীতকে সমকালীন মানুষের হৃদয়কোণে সংরক্ষণ করার প্রয়াস পেয়েছেন। ফলে আমরা পেয়েছি মহামানবদের ছেলেবেলার সমৃদ্ধ বর্ণনা। ঘটনাবহুল জীবনের ছবি। | ছেলেবেলার কথা নিয়ে বহু বিখ্যাতজনই লিখেছেন- লিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। তাঁর বইটির নাম ‘আমার ছেলেবেলা।’ এটি যে নিছকই একটি ছেলেবেলার বর্ণনাধর্মী বই নয়, আমার বিশ্বাস বােদ্ধা পাঠকরা তা অবলীলায় স্বীকার করবেন। কারণ রবীন্দ্রনাথ তাঁর বইটিতে শুধু ছেলেবেলার ঘটনাবহুল স্মৃতিই বর্ণনা করেননি, সমসাময়িক যুগকেও বর্ণনা করেছেন। সে সঙ্গে বলেছেন তাঁর চারপাশে থাকা আপনজনদের কথা। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় উল্লেখ করেছেন তাঁর ভালােলাগা-মন্দলাগাকেও।