“নিরুদ্দেশ যাত্রা” বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা:
দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এসেছিল সজীবদের পরিবার, কিন্তু বাংলাদেশে স্থায়ী কোনাে ঠিকানা হয়নি তাদের। উদ্বাস্তু হলেও এই পরিবারের সবাই প্রাণপণে চেষ্টা করে এ দেশেরই অংশ হয়ে উঠবার। একজন মুক্তিযুদ্ধে যায়, আরেকজন অংশ নেয় সামরিক শাসনবিরােধী আন্দোলনে, আরেকজন এ দেশের নিসর্গের সঙ্গে গড়ে তােলে নিবিড় সম্পর্ক। কিন্তু তাদের বুকের গভীরে থাকে প্রশ্ন ও ক্ষরণ—এই দেশ কি তাদের? দেশ ও বাস্তুভিটার সঙ্গে সংযােগ বিচ্ছিন্ন হলে মানুষের জন্মপরিচয়ই যে সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে সে সত্যকে স্পর্শ করেছে নিরুদ্দেশ যাত্রা। এ উপন্যাসে সামরিক শাসনবিরােধী আন্দোলনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। বিস্তারিত বিবরণ যেমন এসেছে, তেমনই। এসেছে দেশভাগ, বাস্তুত্যাগী মানুষের হাহাকার, দাঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ আর স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। কথাশিল্পী আহমাদ মােস্তফা কামাল তার সজীব গদ্যে বিবিধ আখ্যানের আলােকে একেছেন বিরাট এক সময়ের ছবি, নিয়ে এসেছেন বিশাল ব্যাপ্তি, এঁকেছেন এই সময়ের অস্থিরতা ও বন্ধ্যাত্ব, বৈকল্য ও বিকার, গ্লানি ও বেদনা, অসুখ ও স্থলন, যন্ত্রণা ও ক্লান্তিকে। সাজিয়েছেন মানুষের নিভৃত ও কোলাহলময় মুহূর্তগুলাে। সেই সঙ্গে এঁকেছেন অস্থিমজ্জায় জাগরূক আমাদের ছেলেবেলাকে—আমরা তার গন্ধ পাই, আলাে পাই, শব্দ শুনি।