কথাশিল্পীর প্রধান দায় সমাজের প্রধান অসুখ শনাক্ত করা। একই সঙ্গে সমাজে সংঘটিত ঘটনাপুঞ্জের কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারের চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করা। তার পর্যবেক্ষণে প্রাধান্য পাবে সংঘটিত ঘটনারাশির অভিঘাত। পাশাপাশি যে ধরনের সমাজ তিনি কল্পনা করেন, তারও প্রচ্ছন্ন চিত্র আঁকবেন নিজের রচনায়। এসব চিত্র ও ঘটনাবলির প্রয়োগ যার গল্প-উপন্যাসে দেখা মেলে, তাকেই পাঠক জীবনশিল্পী হিসেবে বরণ করে নেন। শেরিফ আল সায়ারের গল্প পাঠেও আমরা তেমন কিছু দৃশ্যের দেখা পাই। অবশ্যই শেরিফ আমাদের সেই দৃশ্য যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে চান, সেভাবেই ভাবতে অনুপ্রাণিত হই। এই শেরিফ বলতে চেয়েছেন, কখনো কখনো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, বর্তমানকাল আসলে অবিশ্বস্ত। আতঙ্কের। সন্দেহের। এ জন্য মানুষ কখনো কখনো নিজ নিজ বৃত্তে বন্দী, কখনো বা অন্যের তৈরি শিকলে বন্দী। মূল্যবোধের অবক্ষয়, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক-নৈতিক বিচ্যুতি সমাজকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। কেবল ওপরের খোলসটার কারণে সে ভঙ্গুরদশা চোখে পড়ে না। একটুখানি নাড়া দিলেই তা ঝুরঝুর করে ঝরে পড়বে। শেরিফ এই বইয়ে সমাজকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন। সেই বার্তা হলো, মানবজীবন চরম বিশৃঙ্খলায় নষ্ট হওয়ার জন্য নয়, কিন্তু মানুষ নিজেই তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ মানুষকেই খুঁজতে হবে। মোহাম্মদ নূরুল হক, কবি ও প্রাবন্ধিক