‘কালো হাসির জার্নাল’ বই সম্পর্কে… হাসির রকমফের আছে জানতাম—অট্টহাসি বা মুচকি হাসির সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। হাসির যে আবার রঙ আছে, তা জানতাম না। সাদা, নীল, বেগুনি, কমলা, হলুদ, সবুজ বা গোলাপি নয়—একেবারে কালো রঙ। আনন্দের হাসি কিংবা বেদনার হাসি বাংলা সাহিত্যে আলোচিত। কেননা বেদনার সময়েও কোনো কোনো চরিত্রকে হাসতে দেখা যায়। অর্থাৎ হাসি দিয়ে কষ্টটাকে আড়াল করার চেষ্টা করে।
সানাউল্লাহ সাগর কালো হাসি দিয়ে পুরো হাসিটাকেই হয়তো আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হাসির শব্দকে আড়াল বা বন্দি করতে পারেননি। সেই হাসির শব্দটাই তার জার্নালে ঠাঁই করে নিয়েছে। তাই তো তাঁর ‘কালো হাসির জার্নাল’। নাম কবিতায় কবি বলেছেন, ‘হৃদয়ের পাসওয়ার্ড তুলে দিলাম; এবার হাওয়ায় নাচো…’ কিংবা ‘আমাদের তাজমহল খুনের পর থেকেই সুখের মড়ক লেগেছে।’ এখানে উল্লাসের আহ্বান আছে। পরক্ষণেই আছে বিষাদের সুর। তাই হাসির রঙ কালো হওয়াটা দোষের কিছু নয়। বরং নতুন এক অভিধা যুক্ত হয়েছে।
‘কালো হাসির জার্নাল’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো ২০১৪ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে রচিত। সানাউল্লাহ সাগরের আগের দু’টি গ্রন্থের চেয়ে এটি অনেকটা ব্যক্তিগত নিরীক্ষাধর্মী। আবেগ ও বাস্তবতার মিশেলে তীক্ষ্ণ অনুভূতি খেলা করে প্রতিটি কাব্যের শরীরে। এর আগে ২০১৩ সালে প্রথম প্রকাশ হয় ‘অলৌকিক স্বপ্নের যৌথ বিবৃতি’ ও ২০১৫ সালে প্রকাশ হয় ‘সাইরেন’। তৃতীয় গ্রন্থ হিসেবে ‘কালো হাসির জার্নাল’ ২০১৬ সালের এপ্রিলে (পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে) প্রকাশিত হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রন্থের চেয়ে এটি অনেকটা পরিণত ও প্রশংসার দাবিদার।
এর প্রতিটি কবিতাই গদ্যছন্দে রচিত। তবে কোথাও ছন্দপতন হয়েছে বলে মনে হয়নি। অনুপ্রাস ও অলঙ্কারের ক্ষেত্রে কবির নিবিষ্ট মনোযোগ আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। এই কাব্যে উপমার চমৎকারিত্ব লক্ষণীয়। কী সাবলিল ভাবে কবি বলতে পারেন, ‘ফ্যানটা বয়সী বিড়ালের মতো হাফাচ্ছে’। তেমনি তার উপমার বৈচিত্র্য পাঠককে সহজেই মুগ্ধ করে।
–সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
-চিন্তাসূত্র/ জুলাই ২৭, ২০১৬