“উপন্যাস সমগ্র-১৬” বইয়ের সংক্ষিপ্ত লেখা:
সমকালীন কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। গ্রন্থজগতের পরিসংখ্যান এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই কথাশিল্পীর পাঠকমনোরঞ্জনের ক্ষমতা প্রায় কিংবদন্তিতুল্য।
কিশোরবয়সি থেকে বৃদ্ধ, স্বল্পশিক্ষিত থেকে বুদ্ধিজীবী পণ্ডিত-সকলেই তাঁর উপন্যাসের পাঠক, অথবা টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর কাহিনির নাট্যরূপায়ণের বিমুগ্ধ দর্শক। কোন ক্ষমতায় এভাবে সকলকে কাছে টানেন হুমায়ূন আহমেদ? চিত্রল গতিময় সহজ ভাষাবিন্যাস। অভাবনীয় ঘটনা বিশ্বসযোগ্যভাবে ঘটানোর মনোহারী কৌশল। কল্পনা হার মেনে যায় এমন অকল্পনীয় বিদ্যুন্নিভ সংলাপ। এবং তাঁর কাহিনিতে ছড়ানো জীবন কখনোই আমাদের চেনা মধ্যবিত্ত সমাজসত্যের বাইরে ছোটাছুটি করে না। মধ্যবিত্ত-জীবনের আশা নিরাশা অনিশ্চিত এবং দোলাচলপ্রবণ মূল্যবোধ, তার সামান্য লাভ ও সামান্য ক্ষতির বন্ধনে আততিময় অস্তিত্ব। হুমায়ূন আহমেদের যে-কোনো উপন্যাস ধারণ করে আছে তাঁর সৃজনীসত্তার মনন-কল্পনার এ-সকল উপাদান। সাধারণ মানুষের কাতর জীবন চূর্ণকণায় ছড়িয়ে থাকে তাঁর লেখায়।
প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ যখন বেরোয়, তখন প্রথিতযশা অধ্যাপক ডক্টর আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, “হুমায়ূন আহমেদ বয়সে তরুণ, মনে প্রাচীন দ্রষ্টা, মেজাজে জীবনরসিক, স্বভাবে রূপদর্শী, যোগ্যতায় দক্ষ রূপকার। ভবিষ্যতে তিনি বিশিষ্ট জীবনশিল্পী হবেন-এই বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করব।” এ-ভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের। তারপর ক্রমাগত পথচলার প্রবাহে তিনি উপন্যাস, গল্প, নাটক, কল্পবিজ্ঞান, রম্যরচনা এবং শিশুকিশোর গ্রন্থ-সমূহ উপহার দিয়েছেন। এ-দেশের পাঠকসমাজকে। পণ্ডিত সমালোচক ও হৃদয়বান গল্পপ্রেমিক উভয়েরই প্রত্যাশা তিনি পূরণ করেছেন। একই সঙ্গে অতিপ্রজ অথচ শিল্পরুচিময় লেখক তাঁর মতো আর কেউ এই মুহূর্তে আছেন কি না সন্দেহ।