‘প্রশ্নহীন ভক্তিভেজা প্রশস্তির মালা। বাংলাসাহিত্যে রবীন্দ্রচর্চার এই ভ্রান্ত বা অসম্পূর্ণতার জায়গাটি হাসান আজিজুল হকের আগে কেউ এমন নির্মোহভাবে দেখিয়ে দিয়েছে বলে মনে হয় না। গােরা সম্পর্কে হাসানের অভিমত হলাে, যে সমাজ-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে সত্তর বছর আগে গােরা’ লেখা হয়েছিল বর্তমান বাস্তবতা তার অনেক দূরে। এখন আর আমাদের জীবনের সঙ্গে গােরার কোনাে কিছুই মিলবে না।
প্রসঙ্গত উপন্যাসটি বর্জনের প্রশ্ন ওঠে। কেন ‘গােরা’ উপন্যাস আজও পঠিত হয়? তার উত্তর আমরা পাই হাসানের কাছেই। তিনি বলেছেন, মহৎ উপন্যাস মাত্রই একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ মানবজগৎ থাকে, যেখানে থাকে আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রেম-দ্বন্দ্ব। গােরা’র কাহিনিতে মাকড়সার জালের মতাে তৈরি হয়েছে একটা শক্ত বলয়-যাতে আটকে পড়েছেন গােরার মতাে শক্ত হাড়ের মজবুত মানুষও। হাসান মনে করেন, রবীন্দ্রনাথের মতাে মহৎশিল্পীর সম্ভব এমন একটি জগৎ সৃষ্টি করা, যেখানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দেশ, সমাজ, সমাজের মানুষদের আশা-আকাঙ্ক্ষা-বেদনার সাথে একাত্ম হয়েছেন গােরার ছদ্মবেশে, যেখানে নিজেই গােরার চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন ধর্ম কীভাবে মানুষের বিকাশের পথ আগলে ধরে, অসাড় করে ফেলে চিল্ত্তিগুলাে। গােরা যে ভারত অনুসন্ধান করেছে শেষ বিচারে তা রবীন্দ্রনাথেরই কাম্য ভারতবর্ষ।