১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ তথা পূর্ব বঙ্গ ও আসাম প্রদেশ সৃষ্টির পেছনে মূল কারণ ছিল প্রশাসনিক। সব ব্রিটিশ দলিলপত্রে এটা লক্ষ্য করা যায়। আর এই বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের নতুন কোনাে পদক্ষেপ নয়। ব্রিটিশ প্রশাসন ইতিপূর্বে প্রশাসনে গতিশীলতা আনয়নের জন্য পূর্ব বঙ্গ ও আসাম অঞ্চল নিয়ে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিল। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে মুসলমানরা সমর্থন করে। হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের নামে গড়ে তােলে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন। এই সময়ে সৃষ্ট সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মুসলমানদের রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়ে। ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ। ভারতের দুই প্রধান সম্প্রদায় পরিচালিত দুই প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ। বিশ শতকের প্রথম দশকে এসে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ধারা পরিপূর্ণতা লাভ করে। এই বিভাজন রেখার নির্মম সত্যের পথ ধরেই ইতিহাস সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার, ১৯১৬ সালের লক্ষৌ চুক্তির ব্যর্থতা, গান্ধীর নেতৃত্বে খিলাফত ও অসহযােগ আন্দোলনের ব্যর্থতা প্রভৃতি বিষয় দাঁড়িয়ে আছে এই বিভাজন রেখার উপরে। ১৯২৮ সালের নেহরু রিপাের্ট হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটায়। নেহরু রিপাের্টের পাল্টা উপস্থাপিত জিন্নাহর চৌদ্দ দফা মুসলমানদের স্বতন্ত্র পথ চলার দিকনির্দেশনা প্রদান করে। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর বাংলায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠনে মুসলিম প্রাধান্যের ভয়ে কংগ্রেস সমর্থন দেয়নি। মুসলিম লীগের সমর্থনে হক মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ১৯৪৬ সালের কেবিনেট মিশন পরিকল্পনায় জিন্নাহর সমর্থন থাকলেও কংগ্রেস এই পরিকল্পনা থেকে দূরে সরে যায়। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের সময় কংগ্রেস বাংলা বিভাগের পরিকল্পনা পাস করে। এই কংগ্রেস ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় ‘বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ’ শ্লোগান তুলে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। এই কংগ্রেসই আবার ১৯৪৭ সালে বাংলা বিভাগের পক্ষে ছিল কঠোর অবস্থানে। বর্তমান গ্রন্থের বিষয়বস্তু আবর্তিত হয়েছে ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত বিভাজনের পথরেখার ইতিহাসকে অবলম্বন করে।