বরেণ্য কথাশিল্পী বিভূতি ভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের “আদর্শ হিন্দু হোটেল” উপন্যাসটি ইংরেজ সময়ের পটভূমিতে পঁয়তাল্লিশ- ছেচল্লিশ বছর বয়সী এক বামুন হাজারি ঠাকুর’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। বয়স পঁয়তাল্লিশ-ছেচল্লিশ হলেও সে এখনো স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখতে জানে, তার মধ্যে যে উদ্যম তা হাজারি ঠাকুর’কে উপন্যাসে চির-তরুণ করে রেখেছে। শূন্য হাতে শুরু করে শুধুমাত্র স্বপ্নকে বাস্তবায়নের তাগিদে লড়ে যাওয়ার এক অদম্য গল্প এবং সে স্বপ্নের পথে আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো স্বপ্নের আগুনকে দাউ দাউ করে জ্বলতে সাহায্য করে টেঁপির বন্ধু অতসী কিংবা বিধবা কুসুমের মতো চরিত্ররা। কেউ কেউ বলে, মানুষ স্বপ্নের সমান বড়, তবে কখনো কখনো মানুষ স্বপ্নের চেয়েও বড়। উপন্যাসিক গ্রামীণ পটভূমিকায় উপন্যাসের নায়ক হাজারী ঠাকুরকে তার স্বপ্নের চেয়ে বড় করে তুলেছেন।
রাণাঘাটের রেল বাজারের বেচু চক্কতির হোটেলকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের শুরু। রাণাঘাটের রেল বাজারের বেচু চক্কতির হোটেলে বড় বড় করে নাম লেখা না থাকলেও, বেচু চক্কতির হোটেল “আদি ও অকৃত্রিম হিন্দু হোটেল” লোকজনের তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাই পাশেই যদু বাড়ুয্যের হোটেল হলেও বেচু বাবুর হোটেলে রসুয়ে-বামুনে চারজন রান্না করতে বেশ হিমশিম খায়। মাথায় কাঁচা-পাকা চুলওয়ালা বেচু চক্কতি গত দশ বছরে রাণাঘাট রেল বাজারের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তার হোটেলের বেশ উন্নতি করেছে। বনগাঁ, শান্তিপুর, আসাম মেল ট্রেনে করে ফেরা যাত্রীরা মূলত রাণাঘাটের রেল বাজারের হোটেল গুলোর মূল খদ্দের। বেচু চক্কতির হোটেলের চাকর মতি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাড়ানোর সাথে সাথে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে হাঁক দেয়, হোটেলে খদ্দের নিয়ে আসে। ফার্স্ট ক্লাসে ৫ আনা- সেকেন্ড ক্লাসে ৩ আনা দরে টিকেট নিয়ে বেচু বাবুর হোটেলে খাবার বিক্রি হয়। রাণাঘাটের এই বেচু চক্কতির হোটেলে গত পাঁচ বছর ধরে রাঁধুনির কাজ করেন এড়োশোলা গ্রামের হাজারী দেবশর্মা। নাম হাজারী দেবশর্মা আর উপাধি চক্রবর্তী হলেও সবাই হাজারী ঠাকুর নামেই চেনে। উপন্যাসে মূল চরত্রের ভূমিকায় থাকে হাজারি ঠাকুর, যদিও তাকে উপন্যাসের প্রথম দিকে দুর্বল চরিত্রের মনে হলেও উপন্যাসের মসৃণ পথে হাজারী ঠাকুরের জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প পাঠককে অনুপ্রেরণা দেয়।