বাংলাদেশের স্বপ্নপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার আগেই একটি জনসভায় জাতির পক্ষে এই সংগ্রামী নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল এই উপমহাদেশের ইতিহাসে এক অসামান্য অধ্যায়। সেই সময়ের ইতিহাসনির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান চরিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পরপরই তিনি ভারতের কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় ফিরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন। মুসলিম লীগের বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মন্ত্রে বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেন। পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’র বিরুদ্ধে সােচ্চার হন শেখ মুজিব। রাষ্ট্রভাষার সেই আন্দোলনে শাসকের নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাঁকে। তবু তিনি দমে যাননি। বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করতে নেতৃত্ব দেন তিনি। রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার পর শুরু হয়। শাসকগােষ্ঠীর বঞ্চনা থেকে মুক্তির লড়াই। সেই লড়াইয়েও তিনি হয়ে ওঠেন আপসহীন কান্ডারি। রাজনীতির উত্থান-পতন, নানা বাধা-বিপত্তি ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের এক ক্রান্তিলগ্নে তিনি ঘােষণা করেন বাঙালি জাতির মুক্তিসনদ ছয় দফা। এই ছয় দফাকে ঘিরেই সে সময়ের রাজনীতি আবর্তিত হয়। চেপে বসা আইয়ুব-ইয়াহিয়ার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে জনতা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একটি জাতির মুক্তিযুদ্ধের প্রধান প্রেরণা । ইতিহাসের নানা বাঁক, চড়াই-উত্রাইয়ের মধ্য দিয়ে সময়ের হাত ধরে মহানায়কের আসনে বসেছিলেন শেখ মুজিব। সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতার লাল সূর্য। ইতিহাসের এক অমর চরিত্র বঙ্গবন্ধু।